চাঁদা না দেওয়ায় ঢাকার মিডফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের কাছে নৃশংস হত্যকান্ডের শিকার লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের (৩৯) বাড়ি বরগুনায় চলছে স্বজনদের আহাজারি। একদিকে স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ স্ত্রী লাকি বেগম। অপরদিকে ১০ বছরের ছেলে সোহান ও ১৪ বছরের মেয়ে সোহানাকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা জানা নেই তার। এ ঘটনায় বরগুনা জুড়ে চলছে শোকের মাতম।
শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে ঢাকা থেকে নিহত লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের মরদেহ বরগুনায় নিয়ে আসেন স্বজনরা। পরে সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর নামক এলাকায় তার মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
স্বজন সূত্রে জানা যায়, সোহাগের বয়স যখন মাত্র ৭ মাস তখন বজ্রপাতে মৃত্যু হয় তার বাবা আইউব আলীর। এরপর জীবিকার তাগিদে মা আলেয়া বেগম শিশু সোহাগ ও তার আরও দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে বরগুনা ছেড়ে রাজধানী ঢাকায় পাড়ি দেন। ওই সময় থেকেই সোহাগ ঢাকায় বসবাস করতেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার মিডফোর্ডে মেসার্স সোহানা মেটাল নামের একটি দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিমাসে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবিকে কেন্দ্র করেই অভিযুক্তদের সঙ্গে দন্ধ শুরু হয় তার। চাঁদার টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এক সময় সোহাগের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধও করে অভিযুক্তরা। এরপর বুধবার বিকেলে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে চাঁদার দাবিতে সোহাগকে আটকে রেখে দফায় দফায় চাপ প্রয়োগ করা হয়। এতেও চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সোহাগকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পাথর মেরে হত্যা করা হয় বলে জানান স্বজনরা। নিহত সোহাগ তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঢাকার জিঞ্জিরা কদমতলী কেরানিগঞ্জ মডেল টাউন নামক এলাকায় বসবাস করতেন
নিহত সোহাগের মেয়ে সোহানা ও ছেলে সোহান বলেন, চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় বাবাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা এখন এতিম হয়ে গেছি, আমরা এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াব। বাবাকে যারা হত্যা করেছে আমরা তাদের বিচার চাই।
সোহাগের বোন সাজেদা বেগম বলেন, “আমার ভাই প্রায় ১০-১৫ বছর ধরে ব্যবসা করছিলেন। প্রতি মাসে তার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এছাড়াও তার ব্যবসাটাও নিয়ে নিতে চেয়েছেন অভিযুক্তরা। তবে আমার ভাই তাদেরকে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তারা আমার ভাইকে ডেকে নিয়ে মারধর করেন এবং নির্মমভাবে পাথর মেরে হত্যা করে।”
সোহাগের মামা মোঃ মন্টু মিয়া বলেন, “সোহাগ অনেক ভালো ছেলে ছিল। তাকে যেভাবে মারা হয়েছে ওইভাবে কোনো পশুর সঙ্গেও কেউ আচরণ করেনা। যারা এ ধরনের কাজ করেছে, আমরা তাদের সঠিক বিচার চাই, ফাঁসি চাই।
নিহত সোহাগের স্ত্রী লাকি বেগম বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই আমার স্বামীর দোকান থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন হত্যাকারীরা। আমার স্বামীর ব্যবসা তাদের সহ্য হচ্ছিল না। তারা প্রতি মাসে দুই লাখ করে টাকা চাইছিল। আমার স্বামী তা দিতে চায়নি। আর এ কারণেই নির্মমভাবে হত্যার শিকার হতে হয়েছে তাকে।”