বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেছেন, কেউ কেউ সংস্কারের ধোঁয়া তুলে নির্বাচনকে ব্যাহত করতে চাইছে। কেউ কেউ ভাবছেন বিলম্বে ভোট হলে তাদের একটু সুবিধা পাওয়ার সুযোগ আছে। এ রকম মানসিকতা নিয়ে সংস্কারের ধোঁয়া তুলে তারা হয়তো নানা রকম প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমাদের কথা স্পষ্ট। সংস্কার চলবে। যেগুলো ইমার্জেন্সি দরকার, সেগুলো দ্রুত শেষ করে নির্বাচন দেওয়া দরকার। দিনের পর দিন দেশ গণতন্ত্রহীন থাকতে পারে না।
শনিবার (১২ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টায় ময়মনসিংহ নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে নবগঠিত দক্ষিণ জেলা বিএনপির পরিচিতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক ছাত্রনেতা সোহেল বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১৮ ঘণ্টা রাজনীতিতে সময় দেন। এই একজন মানুষ দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে নতুন একটি অধ্যায় শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি খুব শিগগিরই নির্বাচন আসবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সামনের বছরের শুরুতে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা তার কথা বিশ্বাস করি। আশা করছি জানুয়ারিতেই বা প্রথমদিকে নির্বাচন হয়ে যাবে। একটি নির্বাচন যখন আসে তখন পলিটিক্যাল পার্টিগুলো সংগঠিত হয়।
এ সময় বিগত সময়ের আন্দোলন সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা জানেন বিগত ১৫ থেকে ১৬ বছর আমরা একটি সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচনের জন্য লড়াই করেছি। ওই সময় স্বৈরাচার সরকার দেশকে নির্বাচনহীন করে রেখেছিল। দেশে নির্বাচনের নামে তামাশা হয়েছিল। কিন্তু আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লড়াই করেছি। এ লড়াই সম্পূর্ণভাবে সফল হয়নি। সফল হবে, যেদিন দেশে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে একটি নির্বাচন হবে। কিন্তু সেই নির্বাচনে নতুন করে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বরদাস্ত করবে না। জনগণকে আমরা আর গণতন্ত্রহীন করে রাখতে পারি না। এই নির্বাচন নিয়ে যদি নতুন করে আবার তালবাহানা হয়, যদি কোনো অপশক্তি নির্বাচনে জেতার সম্ভাবনা নেই জেনে নির্বাচন অনিশ্চিতের চেষ্টা করে, তাহলে বিএনপি তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে এবং আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম, সেই আন্দোলন কিছুটা স্থগিত হয়ে আছে। সেই আন্দোলন আবারও চালু করে জনগণের অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেব। এ ব্যাপারে আমরা বদ্ধপরিকর।
সংস্কার প্রসঙ্গে এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, সংস্কার এক বা দুই দিনের ব্যাপার নয়। দেশ সংস্কারের ওপর দিয়েই চলছে। আজকে যেটি আছে, কালকে সেটি পরিবর্তন হবে সময়ের প্রয়োজনে। সংস্কার চলবে। আগামী দিনে জনগণের রায় নিয়ে যে সরকার গঠিত হবে, তারা সেই সংস্কার এগিয়ে নিয়ে যাবে।
মিডফোর্ডের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ঘটনাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। যারা অপকর্ম করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে বিএনপি একটি বড় দল। অনেক সময় অনেক অপশক্তি এই দলের মধ্যে ঢুকে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ ৫ তারিখের পর দলে ঢুকেছে। কিন্তু আমাদের দলের অনেক ত্যাগী নেতা যারা ভুল করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, আপনারা তা দেখেছেন। বিএনপিকে খাটো করবার জন্য কেউ কেউ চেষ্টা করছেন। কারো কারো কানে বলে দেওয়া হয়েছে, বিএনপিকে ছোট করতে পারলে তোমাদের বিজয় হওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। তবে আমরা এ ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করছি।
পরিচিতি সভায় দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলুর সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার রোকনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন- ময়মনসিংহ বিএনপির বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরীফুল আলম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী মামুন, আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ।
সভায় নবগঠিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।