Saturday, July 26, 2025

থাকা-খাওয়ার খোঁটা দেওয়ায় দুই শিশু সন্তানসহ ভাবিকে হত্যা করেন নজরুল

আরও পড়ুন

ভাইয়ের বাসায় বিনা খরচে থাকা ও খাওয়ার খোঁটা দেওয়ার ক্ষোভে ময়মনসিংহের ভালুকায় দুই শিশু সন্তানসহ ভাবিকে গলা কেটে হত‍্যা করেছেন নজরুল ইসলাম। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাত ৯টার দিকে ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ন কবীর ঢাকা পোস্টকে এ তথ‍্য নিশ্চিত করেছেন।

ওসি জানান, লোমহর্ষক ও বিভৎস এই ট্রিপল মার্ডারের নেপথ‍্যে বিরাট কোনো কারণ নেই। পারিবারিক তুচ্ছ বিষয়ে ঘাতক দেবরের অসুস্থ জেদ এই ট্রিপল মার্ডারের মূল কারণ। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে হত‍্যাকাণ্ডের মূল আসামি এসব তথ‍্য জানিয়েছে। আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ডের পর তাকে সংশ্লিষ্ট মামলায় কারাগারে পাঠানো হবে।

তিনি আরও জানান, জয়দেবপুর থানার একটি হত্যা মামলার আসামি হয়ে দুই বছর কারাগারে ছিলেন আসামি নজরুল ইসলাম। এরপর তার বড় ভাই রফিকুল ইসলাম একটি সমিতি থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ করে তাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনে গত দুই মাস ধরে নিজের ভাড়া বাসায় একসঙ্গে বসবাস করছিলেন। কিন্তু বিনা খরচে ভাইয়ের বাসায় দেবর নজরুলের বসবাস নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ ছিল ভাবি ময়না আক্তারের। এ কারণে থাকা-খাওয়ার খোঁটা দিতেন ভাবি। এতে ক্ষুব্ধ দেবর বঁটি দিয়ে গত ১৪ জুলাই ভোররাতে ভাবি ও তার দুই শিশু সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করে বিছানায় ফেলে রেখে ঘর তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যান।

আরও পড়ুনঃ  চাঁদা না দেওয়ায় ধর্ষণের চেষ্টা, যুবদল নেতা গ্রেপ্তার

এ ঘটনায় ১৪ জুলাই সকালে ঘরের তালা ভেঙে তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের পর বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। রাতে নিহত ময়না আক্তারের বড় ভাই মো. জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ভালুকা থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় অভিযান চালিয়ে আজ (১৫ জুলাই) বিকেলে জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে হত‍্যাকারী নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান ওসি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আসামি নজরুল ইসলামের বাড়ি নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার সেনের বাজার এলাকায়। তার বাবা সলতু মিয়া মানসিক বিকারগ্রস্ত বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। তার মা দুই ছেলে ছোট থাকা অবস্থায় মুন্সীগঞ্জে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এরপর কেন্দুয়া উপজেলার তেলিগাতি এলাকার ফুফু রাসু বেগমের বাসায় বড় হয় সলতু মিয়ার দুই ছেলে রফিকুল ও নজরুল। সেখানে থেকে কৈশোর বয়সে মানুষের বাসায় কাজ করত নজরুল। কিন্তু নানা কারণে বকাঝকা করার কারণে সেখান থেকে নজরুল এক সময় পালিয়ে গিয়ে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভবঘুরের মতো বসবাস করে এক সময় নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এ কারণে কয়েক বছর আগে নজরুল খুলনা থেকে ঢাকায় এসে জয়দেবপুর থানার একটি হত‍্যা মামলার আসামি হয়ে কারাগারে বন্দি হয়।

আরও পড়ুনঃ  মিডফোর্ডের ঘটনায় জামায়াত আমিরের স্ট্যাটাস

বিষয়টি জানতে পেরে ভ্রাতৃত্বের ভালোবাসায় গত দুই মাস আগে ছোট ভাই নজরুলকে জেল থেকে ছাড়িতে এনে ভালুকায় নিজের বাসায় রেখেছিল বড় ভাই রফিকুল ইসলাম। সেখানে সে বড় ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে রিকশা চালাতো। এরই মাঝে ভাবির খোঁটায় ক্ষুব্ধ নজরুল ইসলাম শিশু নিরব (২), রাইসা মনি (৭) এবং ভাবি ময়না আক্তারকে গলা কেটে হত‍্যা করে পালিয়ে যান।

মঙ্গলবার বাদ এশা উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের কুল্লাবর গ্রামে নানা মৃত আতাব উদ্দিনের পারিবারিক কবরস্থানে জানাজা শেষে তাদের দাফন করা হয়। সেখানে মা ময়না আক্তারের সঙ্গে পাশাপাশি কবরে ছেলে নিরব ও মেয়ে রাইসা মনিকেও দাফন করা হয়।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ